নন্দী টিভি ডেস্ক: রাজনৈতিক কর্মসূচির জন্য স্টেডিয়ামের গ্যালারি ভেঙে দেওয়ার নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছিল যশোরে। পতিত ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভার জন্য এ কাণ্ড হয়। সে জনসভায় দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ভেঙে ফেলা গ্যালারি পুনর্নির্মাণসহ স্টেডিয়ামের উন্নয়নে দ্রুতই ৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে। এরপর হাসিনা ক্ষমতায় ছিলেন এক বছর আট মাস। এ সময়ে গ্যালারি পুনর্নির্মাণও হয়নি আর হয়নি প্রতিশ্রুত উন্নয়নও।
২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যশোর সফর করেন। তখন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি কর্মসূচিতে যোগ দেওয়া ছাড়াও যশোর শামসুল হুদা স্টেডিয়ামে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন তিনি।
যশোরে বড় রাজনৈতিক সমাবেশ হয় সচরাচর শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত মুনশী মেহেরুল্লাহ ময়দান (টাউন হল মাঠ) অথবা নিকটবর্তী কেন্দ্রীয় ঈদগাহে।
যশোর স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা ১২-১৪ হাজারের মতো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় আরও বেশি লোক জমায়েতের টার্গেট থাকায় আগত লোকজনকে ঠাঁই দিতে স্টেডিয়ামের উত্তর পাশের গ্যালারি ভেঙে দেওয়া হয়। ফলে পাশেই অবস্থিত ডা. আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজের মাঠও জনসভার জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়।
শুধু একটি জনসভার জন্য স্টেডিয়ামের গ্যালারির প্রায় চারভাগের একভাগ ভেঙে ফেলায় এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র অসন্তোষ জন্মায়। সোশ্যাল মিডিয়া সরগরম হয়ে ওঠে এ ইস্যুতে। তখন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রতিশ্রুতি দেন গ্যালারি পুনর্নির্মাণ করার।
জনসভায় দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনাও একই প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ভেঙে দেওয়া গ্যালারি পুনর্নির্মাণ, স্টেডিয়ামটি সংস্কার ও নতুন স্থাপনা নির্মাণ বাবদ সরকার দ্রুতই ৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেবে।
প্রতিশ্রুতির পর প্রায় এক বছর আট মাস ক্ষমতায় থাকলেও স্টেডিয়াম সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ প্রকল্প এগোয়নি। শুধু নিরাপত্তার স্বার্থে উত্তরের ফাঁকা অংশে অস্থায়ীভাবে দেওয়াল নির্মাণ করে রাখা হয়েছে।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের সব জেলা ক্রীড়া সংস্থা ভেঙে দেয়। বিলুপ্ত যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব কবীর জানান, প্রকল্পটি তৈরি করে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে সেখানে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়।
প্রকল্পের আওতায় ছিল স্টেডিয়ামে চারতলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ, গাড়ি পার্কিং স্পেস, ব্যবহার অনুপযোগী গ্যালারি পুনর্নির্মাণ এবং মাঠ সংস্কার। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে স্টেডিয়ামে দর্শক ধারণক্ষমতা হতো ৪৪ হাজারের মতো। সুযোগ-সুবিধা বেড়ে যেত অনেক।
ইয়াকুব কবীর আরও জানান, ভেঙে দেওয়া গ্যালারি পুনর্নির্মাণ ছাড়াও স্টেডিয়াম সংস্কারের জন্য তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তৎকালীন সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারসহ ক্ষমতাধরদের শরণাপন্নও হয়েছিলেন। কিন্তু সবাই আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
যশোরের জেলা প্রশাসক, যিনি জেলা ক্রীড়া সংস্থারও সভাপতি, মো. আজাহারুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পর আমি গত ১২ সেপ্টেম্বর যশোরে যোগ দিয়েছি। এখনও স্টেডিয়ামে যাওয়া হয়নি। দেখা যাক, কী করা যায়।’
প্রসঙ্গত, ১৯৫৯ সালে যশোর স্টেডিয়াম প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্রীড়া সংগঠকরা বলছেন, এটি দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে পুরনো স্টেডিয়াম। পরে যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক শামসুল হুদার নামে স্টেডিয়ামটির নামকরণ করা হয়।