নন্দী ডেস্ক: মানবসভ্যতার জন্মলগ্নে মানুষ যাযাবরের মতো ঘুরে বেড়াতো। কালের বিবর্তনে প্রথমে গুহায় ও পরবর্তীতে গাছপালা লতা-পাতা দিয়ে অস্থায়ীভাবে ঘর বানিয়ে বসবাস করতো মানুষ। ধীরে ধীরে মানুষ যাযাবর জীবন ত্যাগ করে এক জায়গায় থিতু হতে শুরু করে। সামর্থ্য ও সাধ্যের মাপকাঠি হিসেব করে মানুষভেদে বাড়িঘর তৈরি হয় ভিন্ন ভিন্নভাবে।
আজকে আমরা এমন ১০টি বিলাসবহুল বাড়ি নিয়ে আলোচনা করবো যেগুলো তৈরি করতে খরচ হয়েছে হাজার কোটি টাকারও বেশি।
১) অ্যান্টিলিয়া, ভারত
বিশ্বের সেরা ধনীদের তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করতে না পারলেও বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসবহুল বাড়িটি নিজের দখলেই রেখেছেন ভারতের ধনকুবের মুকেশ আম্বানি। মুম্বাইয়ের আলতামাউন্ট সড়কে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসবহুল এই বাড়িটি। চার লাখ বর্গফুটের এই আলিশান বাড়িটিতে মোট ফ্লোর সংখ্যা ২৭টি ও এর উচ্চতা ৫৭০ ফুট। এই বাড়ির ফ্লোর সংখ্যা ২৭ হলেও বেশ কয়েকটি ফ্লোর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশ উঁচু। এই ফ্লোরগুলো একেকটা দুই বা তিন তলার সমান। তাই ফ্লোর সংখ্যা বাদ দিয়ে উচ্চতায় হিসেব করলে বাড়িটি প্রায় ৪০ তলা ভবনের সমান উঁচু।
এই বাড়িটি নির্মাণে মুকেশ আম্বানিকে খরচ করতে হয়েছিলো ১৪ হাজার কোটি রুপি বা ১০০ কোটি ডলারের বেশি। তবে এই বাড়ির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
২) মানালাপান মেগাম্যানশন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত মানালাপান মেগাম্যানশন নামের এই বাড়িটি ১৬ একরের বিশাল জায়গাজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এই বাড়িটিকে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম স্টাইল আইকন বাড়ি হিসেবে খেতাব দেওয়া হয়েছে। বাড়িটিতে মোট ৩৩টি বেডরুম ও সুসজ্জিত ৭টি বিশাল বাথরুম রয়েছে। বাড়ির সামনে সুবিশাল বাগানে আছে প্রায় ১৫০০ প্রজাতির গাছপালা। মানালাপান মেগাম্যানশনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিলো ১৯৪০ সালে।
এই বাড়ির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১৯৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৩) এলিসন এস্টেট
ওরাকলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসনের এই বাড়িটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার উডসাইডে অবস্থিত। ২০১৩ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় তৃতীয়স্থান অধিকার করেছিলেন তিনি। ২৩ একর জায়গার উপর ছোট ছোট ১০টি ভবনকে জোড়া দিয়ে অপরূপ সুন্দর এই বাড়িটি তৈরি করা হয়েছে। এই বাড়ির সামনে রয়েছে ছোট্ট একটি লেক ও পেছনে ঘন জঙ্গল। সন্ধ্যার পর আশপাশের পরিবেশের জন্য বাড়িটিকে অনেকটা ভৌতিক মনে হয়। তবে এই বাড়ির ভেতরে ইন্টেরিয়র ডিজাইন এক কথায় অসাধারণ। বাড়িটিতে একটি টি হাউজ ও একটি বাথ হাউজ রয়েছে।
ল্যারি এলিসনের নামানুসারে নির্মিত এলিসন এস্টেটের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৪) আপ-ডাউন কোর্ট
ব্রিটেনের সবচেয়ে দামি এই বাড়িটির মূল মালিক এলেন ভার্স্যু হলেও ব্যাংকের বিশাল অংকের লোন পরিশোধ করতে না পারায় তার এই বাড়িটি বাজেয়াপ্ত করে ব্যাংক। তারপর নিলামে রাশিয়ান ও ব্রিটিশ ধনকুবেরদের পেছনে ফেলে এক ভারতীয় ব্যবসায়ী বাড়িটি কিনে নেন। গোপনীয়তার দোহাই দিয়ে ওই ব্যবসায়ীর নাম এখনও প্রকাশ করা হয়নি। ৫৮ একরের বিশাল জায়গাজুড়ে মেগা স্ট্রাকচারে নির্মিত এই বাড়িতে রয়েছে ১০৩টি রুম, প্রাইভেট সিনেমা হল, সুইমিংপুল। বাড়ির সামনে ও পেছনের অংশে রয়েছে হরেক প্রজাতির গাছে সমৃদ্ধ বাগান। এছাড়াও আপ-ডাউন কোর্টে ঘোড়াশাল, টেনিস কোর্ট ও মার্বেল ড্রাইভওয়ে রয়েছে। উল্লেখ্য যে, এই বাড়ির পার্কিং লটে প্রতিদিন ৮টি লিমুজিন পার্ক করা থাকে।
বাড়িটির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৫) দ্য ম্যানর
দ্য ম্যানর নামের এই বাড়িটি লস এঞ্জেলসের অন্যতম আকর্ষণ। প্রায় সাড়ে ১১ একর জায়গাজুড়ে নির্মিত এই বাড়িটি অনন্য স্তাপত্যশৈলীর জন্য বিখ্যাত। ১৯৯১ সালে নিজে থাকার জন্য এরন স্পেলিং ফ্রেঞ্চ স্টাইলে এই বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন। দ্যা ম্যানর-এর মোট কক্ষসংখ্যা ১২৩টি। এই বাড়িতে একটি সিলভার ওয়্যার হাউজ, টেনিস কোর্ট, জিম, বোলিং অ্যালি দুইটি সুমিং-পুল, প্রাইভেট সিনেমা হল রয়েছে। এছাড়াও বাড়ির সামনে ১৮ শতকের আমেজে তৈরি করা হয়েছে বিশাল এক বাগান। দ্যা ম্যানর-এর বিশাল পার্কিং লটে ১০০টি গাড়ি রাখার জায়গা আছে।
বাড়িটির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি।
৬) হোলোম্বি হিলস ভিলা
বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার ম্যাক্স আজরিয়া এই বাড়ির মালিক। ৩৩,০০০ বর্গফুটের এই বাড়িটি লস এঞ্জেলসের প্লাটিনাম ট্রায়েঙ্গেলে অবস্থিত। এই বাড়িটিতে ১৭ টি বেডরুম এবং ২২ টি বাথরুম রয়েছে। এছাড়াও এই বাড়িতে ৬০০০ বর্গফুটের বিশাল এক প্রাইভেট সিনেমা হলও রয়েছে।
এই বাড়িটির বর্তমান বাজারমূল্য ধরা হয়েছে ৮৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৭) ফিফথ এভিনিউ ডুপ্লেক্স
“ফিফথ এভিনিউ ডুপ্লেক্স” নিউইয়র্ক শহরের সবচেয়ে দামি বাড়ি। “স্যালোমন ব্রাদার্স”-এর নির্বাহী প্রধান জন গাটফ্রেন্ড এই বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন। তাকে কিং অফ ওয়ালস্ট্রিট নামেও ডাকা হতো। এই বাড়িতে ৭টি বেডরুম, ১০টি বাথরুম রয়েছে। মার্বেল পাথর দিয়ে বাড়ির ইন্টেরিয়র ডিজাইন করা হয়েছে অত্যন্ত নিখুঁত ও চমৎকারভাবে। বাড়িটিতে একটি চমৎকার লাইব্রেরি আছে। লাইব্রেরির দেওয়ালগুলো সাজানো হয়েছে ১৭ শতকের পুরাতন চামড়া দিয়ে।
“ফিফথ এভিনিউ ডুপ্লেক্স” নামের বাড়িটির দাম ধরা হয়েছে ১২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৮) ফর্মার ড্যানি থমাস এস্টেট
মার্কিন কৌতুকশিল্পী ড্যানি থমাস “ড্যানি থমাস এস্টেট” নামের এই বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি এই বাড়িটি বিক্রি করে দেন। এই বাড়িটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্ণিয়ার বেভেরলি হিলসে অবস্থিত। এর আয়তন ১৮০০০ বর্গফুট। বাড়িটির সিলিংজুড়ে রয়েছে হাতে আঁকা নান্দনিক সব কারুকার্জ। বাড়ির মেঝে সাজানো বিশ্বের সবচেয়ে দামি কার্পেট দিয়ে। রাজপ্রাসাদের আদলে তৈরি বাড়িটির সামনে রয়েছে চমৎকার একটি সুইমিং পুল।
বাড়ির বর্তমান বাজারমূল্য ১৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৯) ক্যানসিংটন প্যালেস গার্ডেন
লন্ডনে অবস্থিত রাজকীয় এই বাড়ির মালিক রাশিয়ান ধনকুবের রোমান আব্রামোবিচ। তিনি ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের বিখ্যাত দল চেলসি ফুটবল ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা। সুবিশাল এই বাড়িতে টেনিস কোর্ট, প্রাইভেট হেলথ সেন্টারসহ একটি জাদুঘরও রয়েছে।
বাড়িটির বাজারমূল্য ধরা হয়েছে ১৪০ মিলিয়ন ডলার।
১০) সেভেন আপার ফিলোমার গার্ডেন
“সেভেন আপার ফিলোমার গার্ডেন” নামের এই বাড়িটিও লন্ডনে অবস্থিত। ইউক্রেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট লিওনিদ কুচমার মেয়ে ওলেনা পিঙচুক এই বাড়ির মালিক। উল্লেখ্য যে, বিখ্যাত দাতব্য সংস্থা এন্টিএইড ফাউন্ডেশনের জন্ম তার হাত ধরেই। ১০টি বেডরুম সম্বলিত এই বাড়ির আন্ডারগ্রাউন্ডে রয়েছে বিশাল এক সুইমিং পুল, জিম এবং প্রাইভেট সিনেমা হল। গোটা বাড়ির ইন্টেরিয়র ডিজাইন করা হয়েছে মার্বেল পাথর ও স্বর্ণের সংমিশ্রণে।